Saturday, October 5, 2024
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমদৈনন্দিন খবরকালীগঞ্জের দলিল লেখক নাসিরের একাউন্টে কোটি কোটি টাকা

কালীগঞ্জের দলিল লেখক নাসিরের একাউন্টে কোটি কোটি টাকা

আমিনুল ইসলাম লিটন, ঝিনাইদহ থেকে

অবৈধ সম্পদ অর্জনের দায়ে ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক নাসির উদ্দীন চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া মাত্র ০৪ শতক জমি থেকে এখন মাঠে প্রায় ৬০ বিঘা জমি। ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা। আলিশান বাড়ি। স্ত্রী থাকার পরও শ্যালিকা বিয়ে করে তাদেরও সম্পদ দিয়ে ভরপুর করেছেন তিনি। গল্পটি শুনতে অবাক হলেও পেশায় একজন দলিল লেখকের এই অঢেল সম্পদের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন। রাজনৈতিকভাবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও অর্থের ক্ষমতায় হয়েছেন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। চলাফেরা করেন দাপটের সঙ্গে। হত্যাসহ একাধিক মামলা ছিল তার নামে। ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের নাসির চৌধুরী নামের এই দলিল লেখকের বিরুদ্ধে প্রায় ৬ কোটি টাকার অবৈধ পন্থায় অর্থ উপার্জনের অভিযোগে দুদক মামলা করেছেন। দুদকের যশোর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে ঝিনাইদহ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে এই মামলাটি করেন। আদালত মামলাটি নথিভুক্ত করে আগামী ৩রা জানুয়ারি ২০২১ইং প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য তদন্তকারী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন। নাসির চৌধুরী ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সিমলা-রোকনপুর ইউনিয়নের পুকুরিয়া গ্রামের জামসের আলী চৌধুরীর ছেলে। তিনি বর্তমানে কালীগঞ্জ উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক হিসেবে সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে রয়েছেন। পাশাপাশি তিনি কালীগঞ্জের সিমলা-রোকনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, দুদক সম্মনিত জেলা কার্যালয় যশোরের সাবেক সহকারী পরিচালক মো. শহিদুল ইসলাম মোড়ল নাসির চৌধুরীর বিরুদ্ধে থাকা অভিযোগগুলোর তদন্ত করেন। তদন্তকালে দেখা যায় আসামী নাসির চৌধুরী তার নিজ নামে ব্র্যাক ব্যাংক লিঃ যশোর শাখায় একটি সঞ্চয়ী হিসাব ও ১২ টিএফডিআর হিসাব খোলেন। এগুলোতে তিনি বিভন্নি সময়ে মোটা অংকের টাকা লেনদেন করেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সঞ্চয়ী হিসাব থেকে টাকা স্থানন্তর করে অন্য এফডিআর এ জমা করা হয়েছে। সর্বোপরি সকল ক্ষেত্রে এফডিআর হতে হস্তান্তর করে মূল সঞ্চয়ী হিসাবে এনে আবার সেখান থেকে উত্তোলন করেন। নাসিরউদ্দিন চৌধুরী ২০১২ সালের ৭ই ফেব্রয়ারি ২০১৮ সালের ৩০ জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে মোট ৭ টিএফডিআর এ ১ কোটি ৭৬ লাখ ৯০ হাজার টাকা জমা করেছিলেন। যা থেকে তিনি ০১/১১/২০১৫ তারিখে ৩১ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করে একই ব্যাংকে স্ত্রী খাদিজা বেগমের নামে সঞ্চয়ী হিসাবে হস্তান্তর করেন। এছাড়া তিনি ওই শাখায় স্ত্রী খাদিজা বেগমের নামে একটি সঞ্চয়ী ও ৫ টিএফডিআর খুলে লেনদেন করেন। যার মধ্যে সঞ্চয়ী হিসাবটি এখনও চলমান রয়েছে। ০৪/০২/২০১৩ তারিখ থেকে ০৭/১১/২০১৯ তারিখে ওই ৬টি সঞ্চয়ী ও এফডিআরের মাধ্যমে বিপুণ পরিমাণ টাকা লেনদেন করেন। তিনি স্ত্রীর নামের এই সকল এফডিআর ও সঞ্চয়ী হিসাব থেকে ১ কোটি ২৭ লাখ ৪৭ হাজার ৪১৬ টাকা উত্তোলন পূর্বক স্থানান্তর করেন। অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন তার শ্যালিকা (দ্বিতীয় স্ত্রী) মোছাঃ মাহফুজা খাতুনের নামে যশোরের ব্র্যাক ব্যাংকে একটি সঞ্চয়ী হিসাব ও ৪ টিএফডিআর খুলে লেনদেন করেন। যার মধ্যে বর্তমানে একটিও চলমান নেই। ওই ৫টি হিসাব পর্যালোচনা করে দুদক নিশ্চিত হয়েছেন অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন তার দ্বিতীয় স্ত্রীর সঞ্চয়ী হিসাবের টাকা জমা করে সেখান থেকে এফডিআর হিসাবে জমা করেছেন। যেখান থেকে আবার সঞ্চয়ী নিয়ে যাওয়া হয়েছে। গত ০২/০২/২০১৪ তারিখ থেকে ১৪/০৫/২০১৯ তারিখ পর্যন্ত মোট ১ কোটি ৫৬ লাখ ৩৫ হাজার ৬২৮ টাকা উত্তোলন পূর্বক স্থানান্তর করেছেন। নাসির উদ্দিন চৌধুরী তার শ্যালক মোঃ জিয়াকুব আলীর নামে একই ব্র্যাক ব্যাংক ও যশোরের এবি ব্যাংকে এফডিআর ও এম.আই.ডি.এস হিসাব খুলে ৮০ লাখ টাকা জমা করেছিলেন। যা সম্পূর্ণ উত্তোলন করে অন্যত্র স্থানান্তর করেন। তার শ্যালক তদন্তকারী সংস্থাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। নাসির উদ্দিন চৌধুরীর কলেজ পড়য়া ছেলে মোঃ মারুফ হোসেন রিয়াজের নামে রুপালী ব্যাংক লিঃ কালীগঞ্জ শাখায় আর.এস.এস হিসাব খুলে সেখানে ৩০ লাখ টাকা জমা করেন। মামলায় আরো উল্লেখ করা হয়েছে, অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন চৌধুরী অবৈধ পন্থায় দুর্নীতির মাধ্যমে ৫ কোটি ৭০ লাখ ৭৩ হাজার ৪৪ টাকা অর্জন করেছেন। তিনি নিজ নামে, প্রথম স্ত্রী খোদেজা বেগম, দ্বিতীয় স্ত্রী মাহফুজা খাতুন, শ্যালক জিয়াকুব আলী ও ছেলে মারুফ হোসেন রিয়াজের নামে বিভিন্ন ব্যাংকে এফডিআরে জমা করেন। পরবর্তীতে সম্পূর্ণ টাকা উত্তোলন করে অন্যত্র স্থানান্তর করেন। আর এই অপরাধে তার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ধারায় সিনিয়র স্পোশাল জজ আদালতে মামলার আবেদন করা হয়। এ বিষয়ে দুদক যশোর কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ নাজমুস সাদাত জানান, তারা দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে অনুমতি পেয়ে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে তদন্ত ও পরবর্তীতে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি তদন্ত চলছে, এখনও আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। এ বিষয়ে দলিল লেখক নাসির উদ্দীন চৌধুরী জানান, মামলা দায়েরের খবর তিনি জানেন না। তাই এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে চান নি। উল্লেখ্য, দুর্নীতিবাজ নাসিরের কালীগঞ্জ শহরের আড়পাড়ায় ৩টি আলিশান বাড়ি, নদীপাড়ায় একটি ও কুল্লোপাড়ায় বাগান বাড়ি রয়েছে। দলিল লেখক নাসির চৌধুরীর জমি আছে অঢেল। গ্রামে তার কারণে কেউ উচ্চমূল্যে জমি কিনতে পারে না। তার কাছে জমি বিক্রি না করলে বাড়ি হামলা করা হয়। গ্রামের কোন বিবাহিত মেয়ে পিতামাতার ফারাজ বিক্রি করতে চাইলে কম টাকায় সেই জমি কিনে নেন নাসির। পিতার ৪ শতক জমি থেকে নাসির চৌধুরী প্রায় শত কোটি টাকার জমি কিনেছেন। সর্বশেষ তথ্য মতে, নাসিরের নামে ৫৯.২৭ বিঘা জমির সন্ধান মিলেছে। কালীগঞ্জের বাবরা, পকুরিয়া, তিল্লা, ডাকাতিয়া, এ্যাড়েখাল, মনোহরপুর, সিমলাসহ বিভিন্ন মাঠে এই জমি রয়েছে। এ নিয়ে ২০১৯ সালে দৈনিক মানবজমিনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে নাসির চৌধুরীর দুর্নীতির এ সংবাদ প্রকাশিত হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

eleven + 8 =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য