জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে সৌদি বাদশাহ সালমানের বিদ্বেষপূর্ণ ভাষণের প্রতিক্রিয়ায়, ইরানি কর্মকর্তারা এই অঞ্চলে সন্ত্রাসবাদের মূল কারিগর হিসেবে সৌদিকে দায়ী করে।
সৌদির বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজের বক্তব্যকে ‘বিকারগ্রস্ত আলাপ’ আখ্যা দিয়েছে তেহরান। জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে ইরানের বিরুদ্ধে বক্তব্য দেন বাদশাহ আজিজ।
বুধবার জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনের, ৭৫তম অধিশনে ভার্চুয়াল সম্মেলনে বাদশাহ সালমান ইরানের আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের একটি বিস্তৃত সমাধানের জন্য বিশ্ব নেতাদের প্রতি আহ্বান করেন। এছাড়াও ইরান যেন ধ্বংসাত্মক অস্ত্র না পায় সেদিকে বিশ্ব নেতাদের নজর রাখতে বলেন সৌদি বাদশাহ।
২০১৫ সালে ছয় জাতিগোষ্ঠীর সঙ্গে স্বাক্ষরিত পরমাণু চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে সৌদি বাদশাহ বলেন, ‘ওই চুক্তির মাধ্যমে নিজের সুবিধা করে নিয়েছে ইরান। এতে আগ্রাসী কর্মকাণ্ডের মাত্রা বাড়িয়েছে, সন্ত্রাসী নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে এবং সন্ত্রাসবাদকে ব্যবহার করেছে তেহরান।’
তিনি আরো দাবি করেন, ওই চুক্তিতে ‘বিশৃঙ্খলা, উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা’ ছাড়া মধ্যপ্রাচ্যে আর কিছু হয়নি।
‘ইরান সরকারের সাথে অভিজ্ঞতা আমাদেরকে শিখিয়েছে যে, বিশ্ব শান্তি এবং সুরক্ষার জন্য আংশিক সমাধান এবং সামঞ্জস্যবিধান, ইরানের আগ্রাসনকে থামাতে পারবে না।’- বলেন সৌদি বাদশাহ।
‘সত্যের বিকৃতি‘
সৌদি বাদশাহ সালমানের ভাষণের প্রতিক্রিয়ায় ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সাইদ খতিবজাদেহ অভিযোগ করেন, ‘রিয়াদ নিজেদের সন্ত্রাসী কার্যক্রমের অপরাধের দায়ভার অন্যের উপর চাপানোর চেষ্টা করছে। বিভিন্ন সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে দিনের পর দিন আর্থিকসহ প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে আসছে দেশটি।’
সুন্নী মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সৌদি আরব এবং শিয়া অধ্যুষিত ইরান বছরের পর বছর ধরে ইয়েমেনসহ এই অঞ্চলে বেশ কয়েকটি অনৈতিক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট ইয়েমেনের সশস্ত্র গোষ্ঠী হাউথিদের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছে সেখানে ক্রমাগত হাউথিদের সহায়তা দিয়ে আসছে তেহরান।
সৌদির কর্মকাণ্ডে নিন্দা জানিয়ে খতিবজাদেহ আরও বলেন, ‘ইয়েমেনে ক্রমাগত স্থল ও রাজনৈতিক পরাজয়, সৌদি আরবকে বিকারগ্রস্ত আলাপচারিতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। তারা অন্য দেশকে দোষারোপ করে ইয়েমেনী মহিলা ও শিশুদের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে দূরে সরে যেতে চায়।’
তিনি আরও যোগ করেন, ‘ইরানের উপর অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা দিয়ে আসছে তাতে সৌদি আরব উল্লাস করে। এছাড়া ইস্রায়েলের সাথে সম্পর্ক বাড়ানোর প্রচেষ্টা, “নিজেদের লোকের পকেট থেকে বিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ নেওয়া” ইত্যাদি ঘটনা তাদেরকে আরব দেশগুলির মধ্যে একটি “পুঁচকে” জাতিতে পরিণত করছে।’
বাদশাহ সালমান তার বক্তব্যে, ইস্রায়েলের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইনের সম্পর্ক “স্বাভাবিকীকরণ” চুক্তির সমালোচনা করা থেকে বিরত ছিলেন।
জাতিসংঘে ইরানের রাষ্ট্রদূত মজিদ তখত-রাবঞ্চিও বাদশাহ সালমানের অভিযোগকে “ভিত্তিহীন” বলে নিন্দা করেছেন এবং সৌদি আরবকে “এই অঞ্চলে অস্থিরতার উৎস” হিসাবে অভিযুক্ত করেন।