পঞ্চগড়ের আটোয়ারী উপজেলায় ফাহিদ হাসান সিফাত (১৮) নামে এক কলেজছাত্রকে হত্যা করা হয়েছে। নিখোঁজের পাঁচ দিন পর তার লাশ উদ্ধার করেছে র্যাব। গতকাল শনিবার উপজেলার রাধানগর ইউনিয়নের ছোটদাপ এলাকায় নিহতের বাড়ির ২০০ গজ উত্তরে একটি খেতের মাটির নিচ থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। নিহত সিফাত ঐ এলাকার সফিকুল ইসলামের ছেলে এবং দিনাজপুর আদর্শ কলেজের এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। এ ঘটনায় র্যাব-১৩ নিহতের চাচাতো ভাই পঞ্চগড় এম আর সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র মতিউর রহমান মতি (২১), মতির বাবা মোখলেছার রহমান, মা ময়না বেগম ও চাচাতো ভাই লিমনকে আটক করেছে। এ ঘটনায় গোটা এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ছেলেকে নির্মমভাবে হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছে নিহতের পরিবার।
জানা গেছে, গত ৩ জানুয়ারি সিফাত দিনাজপুর থেকে বাসায় আসে। গত ৪ জানুয়ারি রাত ৮টায় সিফাততে ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য বাড়ির পাশে ডেকে নিয়ে যায় মতিউর। পরে সিফাতের বাবা-মা তাকে না পেয়ে পর দিন সন্ধ্যায় আটোয়ারী থানায় একটি সাধারণ ডায়ারি করেন। তারপরেও সিফাতকে না পাওয়ায় তার বাবা গত ৮ জানুয়ারি র্যাবের দ্বারস্থ হলে উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। র্যাব সন্দেহজনকভাবে মতিউরকে আটক করে। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী শনিবার দুপুরে মাটি খুঁড়ে সিফাতের মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
র্যাব জানায়, নানা নাটকীয়তার পর র্যাবের জালে ধরা পড়ে হত্যাকারী সিফাতেরই প্রতিবেশী চাচাতো ভাই মতিউর রহমান মতি। বাড়ির পাশের নির্জন স্থানে ডেকে নিয়ে সিফাতকে শ্বাসরোধে হত্যা করে মতি। পরে সিফাতের ফোন থেকেই তার বাবার কাছে দেড় লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। শুধু তাই নয়, সিফাতকে হত্যার আগেই গর্ত খুঁড়ে রাখে মতি। পরে সেই গর্তেই লাশ মাটিচাপা দেয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এই হত্যার কথা স্বীকার করেছে ঐ যুবক। তার দেওয়া তথ্য মতে লাশ উদ্ধার করা হয়।
সিফাতের বাবা সফিকুল ইসলাম ও মা শারমিনা আক্তার জানান, কেন কী কারণে আমাদের ছেলেকে এভাবে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে; এর সুষ্ঠু বিচার চাই। হত্যাকাণ্ডে জড়িত প্রত্যেককে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান তারা।
র্যাব-১৩ রংপুরের অধিনায়ক রেজা আহমেদ ফেরদৌস জানান, মোবাইল ট্র্যাকিংসহ বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমরা মতিউরকে আটক করি। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী জানা যায়, সে সিফাতকে হত্যা করে মাটিতে পুঁতে রেখেছে। পারিবারিক কলহের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। ময়নাতদন্তসহ প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা লাশ আটোয়ারী থানাপুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছি। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত কোদাল ও হত্যাকারীর মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।
আটোয়ারী থানার ওসি মো. ইজারউদ্দীন জানান, এ ঘটনায় মতিউরসহ চার জনকে আটক করা হয়েছে। মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
ইত্তেফাক/টিআর