মালদ্বীপে নানা কারণে অবৈধ বা অনিয়মিত হয়ে পড়া প্রায় ৪০ হাজার বাংলাদেশিকে বৈধতা দেয়ার অঙ্গীকার করেছে দেশটির সরকার। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে আরো কিছু দক্ষ শ্রমিক নেয়ার পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে। ঢাকা সফররত মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ সাহিদের নেতৃত্বাধীন প্রতিনিধিদলের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের বৈঠকে এ অবৈধ হয়ে পড়া বাংলাদেশিদের দুর্ভোগ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ঢাকা দ্রুততার সঙ্গে অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধ করে নিতে মালদ্বীপ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানায়। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানির বিষয়ে বিদ্যমান নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আনুরোধও করা হয়। জবাবে মালে’র প্রতিনিধিরা খোলাসা করেই বলেন, দেশটিতে থাকা অবৈধ বিদেশি কর্মীদের বৈধকরণের প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে আর একজন অদক্ষ শ্রমিকও নেবে না তারা। আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ সাহিদ শ্রমিক নিয়োগ সংক্রান্ত নিষেধাজ্ঞার ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ থেকে অদক্ষ শ্রমিক আমদানিতে তারা অপারগ। তবে বৈধকরণের প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর অবশ্যই আগের মতো বাংলাদেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নেয়া হবে। তার এ অঙ্গীকারে বাংলাদেশ ভরসা রাখতে পারে উল্লেখ করে তিনি দেশটিতে থাকা অবৈধ বাংলাদেশিদের বৈধকরণের প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে একটি দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সইয়ের প্রস্তাব করেন। ঢাকা তাৎক্ষণিকভাবে সেই প্রস্তাবে সায় দেয় এবং জানায় এ নিয়ে জনশক্তি সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে দ্রুতই আলোচনা হবে। ঢাকা ও মালে’র সেই আনুষ্ঠানিক বৈঠকে দেশটিতে থাকা বাংলাদেশিরা যেন কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন বিশেষত দালাল বা ব্রোকার চক্রের বিষয়ে নজর রাখতে মালদ্বীপ কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। সেক্ষেত্রে সরকার মনোনীত এজেন্সি এবং মালেস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশনের চূড়ান্ত অনুমোদন সাপেক্ষে বাংলাদেশ থেকে আগামীতে জনশক্তি নিয়োগের প্রস্তাব করে ঢাকা। মালদ্বীপ প্রতিনিধিদল প্রস্তাবটিকে ইতিবাচকভাবে নোটে নেয়। উল্লেখ্য, সরকারি সূত্রমতে- মালদ্বীপে বৈধ-অবৈধ মিলে প্রায় ৮৫ হাজার বাংলাদেশি রয়েছেন। এরমধ্যে প্রায় অর্ধেকই অবৈধ। অনিয়মিত এবং কর্মহীন ওই বাংলাদেশিরা করোনাকালে বেশ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন। সূত্রের খবর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে মালয়েশিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট মিনিস্ট্রি অবৈধ বিদেশিদের বৈধকরণের পূর্ব শর্ত হিসেবে রেজিস্ট্রেশন প্রোগ্রাম চালু করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩৮ হাজার বাংলাদেশি সেখানে রেজিস্ট্রেশন করেছেন।
মুজিববর্ষে ঢাকায় আসবেন মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট সলিহ: এদিকে মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মালদ্বীপের প্রেসিডেন্ট ইবরাহিম মোহামেদ সলিহ ঢাকা সফর করবেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন। মঙ্গলবার মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল্লাহ সাহিদের সঙ্গে বৈঠকের পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মা’য় যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান। তবে মন্ত্রী ওই সফরের তারিখ বলেননি। মোমেন বলেন, দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় আমরা অনেক বিষয়েই একমত হয়েছি। এরমধ্যে ম্যানপাওয়ার চুক্তি ও দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমির মধ্যে সমঝোতা স্মারক রয়েছে। বাণিজ্য বৃদ্ধি, কানেকটিভিটি, শিপিং লাইনসহ অন্যান্য সহযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে। মালদ্বীপে অবস্থিত দেশি-বিদেশি সবাইকে সরকারি খরচে কোভিড টিকা দেয়া হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, এজন্য আমরা ওই দেশে কিছু নার্স পাঠাবো। সংবাদ সম্মেলনে আবদুল্লাহ সাহিদ করোনা মহামারিকালে সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশি কর্মীরা মালদ্বীপের অথনৈতিক উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। সেই প্রেক্ষাপটে মালদ্বীপে যেসব বাংলাদেশি অনিয়মিত রয়েছেন তাদের বৈধকরণ এবং যারা ফেরত আসতে চায় তাদের প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে তার সরকার কাজ করছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের আমন্ত্রণে মালদ্বীপের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাহিদ চারদিনের সফরে সোমবার ঢাকা এসেছেন। আজ প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তিনি। কাল তার দেশে ফিরে যাওয়ার কথা রয়েছে।