হাইকোর্ট বলেছে, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য সরকার প্রধান যেখানে ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন, সেখানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বিশেষ করে নির্বাহী পরিচালক, ডেপুটি গভর্নর, ডিজিএম ও জিএমরা ঠগবাজ, প্রতারক ও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তদের প্রশ্রয় দিচ্ছেন। ব্যক্তি স্বার্থে আর্থিক খাতের এই বিপর্যয়ের জন্য তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত। আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংক্রান্ত এক মামলার পূর্ণাঙ্গ আদেশে এমন পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ।
হাইকোর্ট বলেছে, ২০০২ সাল থেকে আজ পর্যন্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম দেখভালের দায়িত্বে থাকা বাংলাদেশ ব্যাংকের নিযুক্ত কর্মকর্তাদের সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। দুদকের উচিত এসব ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রাথমিক অনুসন্ধান কার্যক্রম পরিচালনা করা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এসব অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় ঠগবাজ ব্যবসায়ী, প্রতারকরা যাতে জনসাধারণের অর্থ আত্মসাৎ করতে না পারে, বাংলাদেশে ব্যাংকের গভর্নরকে সে বিষয়ে সচেষ্ট থাকতে হবে। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এদের গোপন আঁতাত, পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দিতে হবে।
বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান। গত বছর প্রতিষ্ঠানটির বিদেশি পৃষ্ঠপোষক অংশীদার ‘টিজ মার্ট ইনকরপোরেটেড’ অর্থ আত্মসাৎ, অব্যবস্থাপনাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিআইএফসি পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে। এসব অভিযোগে বিআইএফসি চেয়ারম্যানের অপসারণ, নতুন করে পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করে টিজ মার্ট। সেই সঙ্গে পি কে হালদার সংশ্লিষ্ট ‘সুকুজা ভেনচার লিমিটেড’ ও ‘কাঞ্চি ভেনচার লিমিটেড’ কীভাবে বিআইএফসির পরিচালনা পর্ষদে যুক্ত হয়েছে, সেজন্য এ দুটি প্রতিষ্ঠানের কাগজপত্র যাচাইবাছাই করার নির্দেশনাও চাওয়া হয়। ঐ আবেদনের ওপর গত ১৭ ডিসেম্বর পর্যবেক্ষণসহ আদেশ দেয় উচ্চ আদালত। গতকাল আদেশের অনুলিপি প্রকাশ হয়েছে।
আদেশে হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীকে বিআইএফসির চেয়ারম্যান ও স্বাধীন-স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে নিয়োগের কথা বলেছে আদালত। তিনি পরিচালনা পর্ষদ এবং বার্ষিক সাধারণ সভায় সভাপতিত্ব করবেন। এছাড়া সাবেক সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. জামিল শরিফ, আইসিএবির সাবেক সহসভাপতি মো. মাহামুদ হোসেন ও মো. শাহাদাত হুসাইনকে স্বাধীন পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে। এই আর্থিক সংস্থার নিরীক্ষা পরিচালনার জন্য নিরীক্ষক কোম্পানি নূরুল ফারুখ হাসান অ্যান্ড কোম্পানি চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্টসকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই নিরীক্ষক কোম্পানি বিআইএফসির বিভিন্ন অনিয়মের বিষয় খতিয়ে দেখবে। আগামী ২২ ফেব্রুয়ারি এ বিষয়ে অগ্রগতি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।