তাফসীর “সূরা আল ফালাক”আয়াত নং ০৫
( ومن شر حاسد اذا حسد )”আর হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে”।
হিংসার মানে হচ্ছে,কোন ব্যক্তিকে আল্লাহ যে অনুগ্রহ, শ্রেষ্ঠত্ব বা গুণাবলী দান করেছে তা দেখে কোন ব্যক্তি নিজের মধ্যে জ্বালা অনুভব করে এবং তার থেকে ওগুলো ছিনিয়ে নিয়ে এ দ্বিতীয় ব্যক্তিকে দেয়া হোক, অথবা কমপক্ষে তার থেকে সেগুলো অবশ্যি ছিনিয়ে নেয়া হোক এ আশা করতে থাকে। তবে কোন ব্যক্তি যদি আশা করে, অন্যের প্রতি যে অনুগ্রহ করা হয়েছে তার প্রতিও তাই করা হোক, তাহলে এটাকে হিংসার সংজ্ঞায় ফেলা যায় না। এখানে হিংসুক যখন হিংসা করে অর্থাৎ তার মনের আগুন নিভানোর জন্য নিজের কথা ও কাজের মাধ্যমে কোন পদক্ষেপ নেয়, সেই অবস্থায় তার অনিষ্টকারিতা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া হয়েছে।
আল্লাহ তা’আলা মানুষকে যতগুলো মানবিক দুর্বলতা বা বর্জনীয় গুণ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন তার মধ্যে অন্যতম একটি দুর্বলতা হচ্ছে হিংসা। সেজন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হিংসা হতে দূরে থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন।عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ” إِيَّاكُمْ وَالْحَسَدَ فَإِنَّ الْحَسَدَ يَأْكُلُ الْحَسَنَاتِ كَمَا تَأْكُلُ النَّارُ الْحَطَبَ ” . أَوْ قَالَ ” الْعُشْبَ ” .
আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:
তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহি ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ তোমরা অবশ্যই হিংসা পরিহার করবে। কারণ আগুন যেভাবে কাঠকে বা ঘাসকে খেয়ে ফেলে, তেমনি হিংসাও মানুষের নেক আমলকে খেয়ে ফেলে। সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৪৯০৩
ইহুদি এবং খ্রীষ্টানরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তার নবুয়্যতের জন্য ও আল্লাহর অনুগ্রহের কারণে হিংসা করত। হিংসার কারণেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর ইহুদীরা জাদু করেছিল, হত্যার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল। তাছাড়া ইহুদী, মুশরিক ও মুনাফিকরা মুসলিমদের ইসলামের নেয়ামত পাওয়া দেখে হিংসার অনলে দগ্ধ হত। আল্লাহ তাআলা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইহুদী এবং খ্রিষ্টানদের হিংসা থেকে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন।
শিক্ষা ও প্রায়োগিক ক্ষেত্র:
আমরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে সকল কর্মকাণ্ডে প্রকাশ্য অথবা অপ্রকাশ্য হিংসুকের হিংসা পাত্র হতে পারি। তাই সকল ক্ষেত্রে আল্লাহর উপর ভরসা করা উচিত এবং তার কাছে সকল ধরনের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে।