Monday, November 10, 2025
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

Homeদাওয়াআওয়াজখতিব মহিবুল্লাহর অপহরণের ঘটনা বিশ্লেষণ

খতিব মহিবুল্লাহর অপহরণের ঘটনা বিশ্লেষণ

লেটস রিক্যাপ:

টঙ্গী থেকে খতীব মিয়াজী নিখোঁজ হলেন। পরিবার দাবি করলো ইসকন তাকে হুমকি দিয়ে আসছিল। তাদের আশঙ্কা তিনি অপহৃত হয়েছেন। ঘটনা ভাইরাল হয়ে গেলো।

তাকে পাওয়া গেলো পরদিন. কয়েক শো কিমোমিটার দূরে ভারত সীমান্তবর্তী পঞ্চগড়ে। অচেতন, অর্ধ উলঙ্গ, এবং পায়ে “হাতে-পায়ে” শেকল লাগানো অবস্থায়।

ফিরে আসার পর তিনি জানালেন, সকালে হাটার সময় কিছু অজ্ঞাত লোক সাদা মাইক্রোবাসে তুলে নেয় তাকে। লোকগুলোকে “বাংলাদেশের মনে হয়নি”। গাড়িতে নানাভাবে নির্যাতন করা হলে, এক পর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। জ্ঞান ফিরলে নিজেকে আবিস্কার করেন পঞ্চগড়ে।

গাজীপুরের ধর্ষন মামলা, বুয়েটের ইসকনের মাধ্যমে র‍্যাডিকালাইযড ছাত্রের বিরুদ্ধে ধর্ষনের অভিযোগে অলরেডি তেতে থাকা মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়ে। বিক্ষোভ হয় সারা দেশে। এক মিছিলে অংশ নেন উক্ত খতীবও।

মামলা হয়। মামলার এজহার লেখার সময় অ্যালেজড অপহরণের স্থানের ব্যাপারে একটা পরিবর্তন আসে। খতীব মিয়াজী বলেছিলেন সাদা মাইক্রোবাস তাকে তুলে নেয় মাজুখান ব্রীজ পার হবার পর। কিন্তু টঙ্গির পুলিশ জানায়, যে জায়গার কথা বলা হচ্ছে সেটা পূবাইল থানার আওতায় পড়ে। অপহরণের স্থান ব্রীজের এপাড়ে দিলে সেটা টঙ্গি থানার জুরিসডিকশানে থাকবে। তখন অপারেশনের স্থান হিশেবে ব্রীজের আগের ফিলিং স্টেশনের সামনে দেয়া হয়।[১]

পুলিশ তদন্ত শুরু করে। শুরুতেই মিডিয়াতে বক্তব্য চলে আসে, মামলায় কোন গোষ্ঠীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। দিন দুই পর পুলিশ গিয়ে খতীব মিয়াজীকে থানায় নিয়ে যায়। তারপর বেশ কয়েকটা ব্যাপার ঘটে—

– সরকার ঘনিষ্ঠ কিছু নিউস আউটলেটে ‘নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক’ সূত্রে খবর ছাপা হতে শুরু করে: খতীব অপহরণ হননি, পুরো ব্যাপারটা তিনি নিজেই সাজিয়েছেন।

– এজেন্সি ঘনিষ্ঠ কিছু আইডি থেকে সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ করা হয়। উল্লেখ্য খতীব বলছেন তিনি অপহৃত হয়েছেন মাজুখান ব্রীজ পার হবার পর। ফুটেজ কিন্তু ঐখানকার না। ব্রীজের আগের ফিলিং স্টেশনের।

– খতীবের একটি ভিডিও মিডিয়াতে প্রচার হতে শুরু করে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে তিনি বলছেন: কেউ তাকে অপহরণ করেনি, তিনি নিজেই এসব জায়গায় গিয়েছেন। বছর দুয়েক আগে তার ব্রেন টিউমারের অপারেশন হয়েছে। তার মাথার ভেতরে কেউ কথা বলে। সেই কথা শুনে শুনে তিনি এসব জায়গায় গেছেন। পঞ্চগড় থেকে ফেরার পর যা কিছু বলেছেন তা উনার অপরাধ।

– সবশেষে পুলিশের ব্রিফিং হয়—যেখানে বলা হয় পুরো ঘটনাটি নাকি খতীব নিজেই সাজিয়েছেন।

এবার পুরো ঘটনাপ্রবাহ মাথায় রেখে কয়েকটা বিষয়ে একটু চিন্তা করা যাক-

ক) মিডিয়াতে প্রকাশিত খতীব মিয়াজীর ‘ভিডিও স্বীকারোক্তি”-তে অসংখ্য কাট। তার কথা বলার ভঙ্গি অস্বাভাবিক। [২] বক্তব্য আগের চেয়ে একেবারে আলাদা। যা থেকে মোটামুটি শক্ত ধারনা জন্মায় যে এই বক্তব্য স্ক্রিপ্টেড।

এই ভিডিও কে বানিয়েছে? কার উদ্যোগে? যদি পুলিশ করে থাকে—কেন তদন্তাধীন বিষয়ে এভাবে ভিডিও করা হলো? আর সেটা মিডিয়াকে দেয়া হলো?

যদি মিডিয়া করে থাকে—তাহলে তদন্ত চলাকালীন সময়ে মিডিয়াকে প্রবেশ ও ভিডিও করার অনুমতি দিলো কেন পুলিশ? বিশেষ করে পুলিশ যখন নিজেই দাবি করছে খতীব মিয়াজী “মানসিকভাবে অসুস্থ”?

একটা তদন্তাধীন বিষয়ে, যিনি অ্যালেজড ভিকটিম, তার কাছ থেকে পুলিশি ‘হেফাযতে’ থাকা অবস্থায় ভিডিও স্বীকারোক্তি আসা কোন দিক থেকেই স্বাভাবিক না।

খ) হাসিনার আমলে যাকে ইচ্ছে ধরে এনে তাকে দিয়ে ইচ্ছেমতো বক্তব্য দেয়ানোর একটা কমন প্যাটার্ন ছিল। এই মিডিয়া ট্রায়ালের মাধ্যমে অসংখ্য জং—ই মামলা কে জাস্টিফাই করা হয়েছিল। সম্মতি উৎপাদন করা হয়েছিল গুম-খুন-নির্যাতনের।

এসব ঘটনার কারণে হাসিনা আমলের শেষ দিকে ডিবি অফিস হারুনের ভাতের হোটেল নামে বেশ কুখ্যাতিও পেয়েছিল।

সবশেষে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় ছাত্র সমন্বয়কদের নিয়ে একই রকম নাটক সাজানো হয়েছিল। খতীব মিয়াজীর সাথে যা হয়েছে তা যে একই স্ক্রিপ্টের পুনরাবৃত্তি না, সেটা আমরা কিভাবে বুঝবো?

গ) খতীব মিয়াজীর ছেলে বলছেন, কাল রাতে সে যখন তার বাবার সাথে কথা বলে, তখন তিনি আগের বক্তব্যেই “স্থির” থাকেন। অর্থাৎ অপহৃত হবার কথা বলেন। কিন্তু পুলিশের অনেক অফিসার সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তারা ‘বোঝানোর’ পর তার বাবা বলেন আসলে তিনি অপহৃত হননি। তিনি নিজেই পঞ্চগড় গেছেন। [৩]

পুলিশ অফিসাররা তাকে কী বোঝালেন এবং কীভাবে বোঝালেন? একজন খতীবকে বোঝাতে কয়জন পুলিশ অফিসার লাগে?

ঘ) খতীব বলেছিলেন তাকে মাইক্রোতে তোলা হয়েছে মাজুখান ব্রীজের পর। প্রকাশিত সিসিটিভি ফুটেজ ব্রীজের আগের একটা ফিলিং স্টেশনের। এই ফুটেজ থেকে কিভাবে প্রমাণিত হয় যে ব্রীজ পার হবার পর উনাকে আসলেই অপহরণ করা হয়নি?

ঙ) এই ফুটেজ প্রথমে প্রকাশিত হল কিছু সোশ্যাল মিডিয়া আইডি থেকে। এই ফুটেজ তাদের কে দিল? যেসব আইডি থেকে এ ভিডিওগুলো এসেছে তাদের ব্যাপারে জনমনে শক্ত ধারনা আছে যে তারা রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন এজেন্সির সাথে জড়িত। সেই ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় এজেন্সি কেন ইচ্ছাকৃত ভাবে সোশ্যাল মিডিয়াতে ফুটেজ ‘লিক’ করাবে?

আবারও মনে করিয়ে দেই, এই ধরণের ‘লিকড’ অডিও মিডিয়ার কাছে প্রকাশ করা হাসিনার আমলে প্রশাসন এবং বাহিনীগুলোর বহুল ব্যবহৃত পদ্ধতি ছিল।

চ) খতীবকে পাওয়া গেছে অচেতন অবস্থায়, আংশিকভাবে উলঙ্গ, এবং পায়ে শেকল বাঁধা। যদি ঘটনাটি তিনি নিজে সাজিয়ে থাকেন—তাহলে শেকল কোথা থেকে পেলেন? কীভাবে নিজেই নিজেকে শেকল পরালেন?

ছ) বলা হচ্ছে খতীব সাহেব মানসিকভাবে অসুস্থ। তিনি বলেছেন তার মাথার মধ্যে কেউ কথা বলে। মাথার মধ্যে কেউ কথা বলা এমন মনে হওয়া সিভিয়ার স্কিৎযোফ্রেনিয়ার লক্ষণ।

যদি আসলেই তার এমন সমস্যা থেকে থাকে, তাহলে নিশ্চয় ঐদিনের আগেও এমন এপিসোড হবার কথা। এরকম কোন লক্ষণ কি আগে কেউ দেখেছে? এই ভদ্রলোক এতোদিন নামায পড়ালেন কিভাবে? কোন ক্লিনিকাল ডায়াগনসিস কি হয়েছে?

এর আগে খতীব সাহেবের অন্যান্য ভিডিও, কিংবা মিছিলে তার বক্তব্য—কোথাও থাকে স্কিৎযোফ্রেনিক বা এ জাতীয় কিছু মনে হয়নি। উনি কি ডিসেসোশিয়েটিভ পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারেও ভুগছেন? এক মানুষের মধ্যে অনেক ধরণের পারসোনালিটি? নাকি ঐ ভিডিও বক্তব্য জোর করে আদায় করা?

জ) খতীব সাহেবের নতুন বক্তব্যের একটা অংশ কৌট করছি—

“একপর্যায়ে আমি দেখি যে পঞ্চগড় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, পুলিশ লাইনস এগুলো হেঁটে পার হয়ে গেছি। পার হয়ে গিয়ে আমি একটা শিকল কুড়িয়ে পাইলাম। ওইটা নিয়ে আমি এক যায়গায় প্রস্রাব করতে বসলাম। প্রস্রাব করলাম আর পায়জামায় প্রস্রাব লাগল, এর পরে জামায়ও লাগল। জামা খুইলা ফালাইলাম, পায়জামাও খুললাম। কিন্তু খোলার পরে আবার পরতে হবে এই জিনিসটা আমি আর পারি নাই ঠাণ্ডায়। ঠাণ্ডায় ওইখানে শুইয়া পড়লাম আর পায়ে শিকল দিলাম। এইটা কেন করতেছি এইটার কোনো চিন্তাভাবনা আমার নাই, খালি যা মাথায় আসতেছে তা করতেছি।“[৪]

আপনারা বিচার করুন, এটা কতোটা স্বাভাবিক এবং বিশ্বাসযোগ্য:

ঝ) বাংলাদেশ পুলিশ অতীতে একাধিকবার নাটকীয় দাবি করেছে—পরে সেগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।

এক ঘটনায় বলা হয়েছিল একজন ছেলে তার মাকে হত্যা করে ফ্রিজে রেখেছে—পরে প্রমাণিত হয় সে নির্দোষ। আরেক ঘটনায় বলা হয়েছিল একটি মেয়েকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে—পরে সেই মেয়েকেই জীবিত পাওয়া যায়। [৫]

দুইদিন আগে খেলনা বন্দুক নিয়ে মিছিল করায়, একজন লোককে সন্ত্রাসবিরোধী মামলা দেয়া হয়েছে। অন্যদিকে পুলিশ ফাঁড়িতে বোমাহামলা এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের হত্যার হুমকি দেয়া এলজি টিভি অ্যাকটিভিস্টকে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয়নি।

এসব ইতিহাস পুলিশের বিশ্বাসযোগ্যতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।

এই ঘটনায় সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক তদন্তের উদ্দেশ্য সত্য উদঘাটন না, বরং একটা নির্দিষ্ট বয়ান প্রতিষ্ঠা করা। হাসিনা আমলে প্রশাসন এবং বিভিন্ন এজেন্সি যেসব কূটকৌশল ব্যবহার করতো, ঠিক সেগুলো ব্যবহার হচ্ছে এখানেও।

কাস্টডিতে বক্তব্য বদলানো, ভিডিও রেকর্ড করে মিডিয়াতে ছড়িয়ে দেওয়া, সোশ্যাল মিডিয়াতে “লিকড” ফুটেজ ছড়ানো—সব সাই-অপের বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের মানুষ এগুলোর সাথে খুব পরিচিত।

কিন্তু আবারও মিডিয়া, মানবাধিকার কর্মী, ছাত্রনেতা, রাজনৈতিক মহল—প্রশ্ন তুলতে ব্যর্থ হয়েছে। সারা বছর সংস্কার, মুক্তি, আর অধিকারের কথা বললেও, বাস্তবে রাষ্ট্র একই স্ক্রিপ্টে চলছে—আর সংস্কার আর বিপ্লবের ফেরিওয়ালারাও চুপ করে তা মেনে নিচ্ছে।

রাষ্ট্র যখন সত্যের বদলে বয়ান ম্যানুফ্যাকচার করতে শুরু করে, তখন আইনব্যবস্থা কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে যায়। মাওলানা নিয়াজীর ঘটনায় বাস্তবতা যা-ই হোক, আমরা যদি এমন গল্প প্রশ্নহীনভাবে গ্রহণ করি, তবে আগামীদিনে কোনো নাগরিকই নিরাপদ থাকবে না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × three =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য