বাংলাদেশের আকাশে শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস হিসেবে পরিচিত মিথেনের ঘন আস্তরণের সন্ধান পাওয়া গেছে, যা ভাবিয়ে তুলেছে পরিবেশবিদদের। কারণ মিথেন এমন একটি গ্রিনহাউস গ্যাস, যা বায়ুম-লে তার প্রথম দুই দশকে কার্বন ডাইঅক্সাইডের তুলনায় প্রায় ৮০ গুণ বেশি শক্তিশালী।
স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যের বরাত দিয়ে কানাডার টরেন্টোভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিএনএন ব্লুমবার্গ গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক খবরে এ কথা জানিয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের আকাশে মিথেনের উপস্থিতিকে ‘রহস্যময়’ আখ্যা দিয়ে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনে সবচেয়ে ঝুঁকিতে যেসব দেশ রয়েছে তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। কিন্তু এ দেশটিই এখন বাতাসে মিথেন নিঃসরণে বড় ভূমিকা রাখছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এ বছর প্যারিসভিত্তিক কোম্পানি ক্যারোস-এসএএস নামের একটি প্রতিষ্ঠান সবচেয়ে বেশি মিথেন গ্যাস নিঃসরণের সর্বোচ্চ ১২টি হার শনাক্ত করেছে। যার সবগুলোই ঘটেছে বাংলাদেশে। যদিও স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণক্ষমতা থাকা আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান জিএইচজিস্যাট ইনকরপোরেশনের প্রেসিডেন্ট স্টেফানি জার্মেইন বলেন, আমরা সবচেয়ে টেকসই মিথেন নিঃসরণ দেখতে পেয়েছি। তবে এর উৎস স্পষ্টভাবে শনাক্ত করতে পারিনি।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির বিভিন্ন তথ্য পর্যালোচনা করে ব্লুফিল্ড টেকনোলজিস ইনকরপোরেশন। গত বছরের মে মাসে তারা যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার ওপরেও প্রচুর পরিমাণ মিথেনের মেঘ দেখতে পায়। পাশাপাশি তারা বাংলাদেশের আকাশেও ঘন মিথেনের আস্তরণ শনাক্ত করে। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা ইয়োতাম এরিয়েল বলেন, ‘আমাদের বিশ্লেষণ থেকে দেখা যায়- বিশ্বে সবচেয়ে বেশি মিথেন নিঃসরণকারী দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। এ বিষয়টি স্যাটেলাইটেই শনাক্ত করা যায়।’
তবে সবচেয়ে বেশি মিথেন গ্যাসের উৎস কোনটি, তা চিহ্নিত করার কাজ সবেমাত্র শুরু করেছেন বিজ্ঞানীরা। মহাশূন্য থেকে এই পর্যবেক্ষণ হতে পারে মৌসুমভিত্তিক। কারণ মেঘের আচ্ছাদন, বৃষ্টিপাত এবং আলোর তীব্রতার ভিন্নতার কারণে মৌসুমভেদে এর পরিবর্তন দেখা দিতে পারে। যদিও সমুদ্র থেকে নিঃসরিত গ্যাস শনাক্ত করা স্যাটেলাইটের জন্য কঠিন হতে পারে। এসব গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে আর্কটিকের মতো উচ্চতর অক্ষাংশে। আর্কটিকে রাশিয়ার রয়েছে তেল ও গ্যাস পরিচালনার বড় কর্মযজ্ঞ। এর ফলে সেখান থেকে সীমিত তথ্যই হাতে আসে। যার ওপর ভিত্তি করে বৈশ্বিক সার্বিক পরিস্থিতিকে ব্যাখ্যা করা কঠিন।
কিন্তু বাংলাদেশ থেকে যে মাত্রায় মিথেন গ্যাস নিঃসরণ হচ্ছে, তা দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। কারণ সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে কম উচ্চতা, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও চরম ভাবাপন্ন আবহাওয়া বাংলাদেশকে ক্রমেই বিপন্ন করে তুলছে। ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরামের চেয়ার বর্তমানে বাংলাদেশ।
এই ফোরামের ৪৮টি সদস্য দেশে রয়েছে ১২০ কোটি মানুষ। তারা জলবায়ু পরিবর্তনের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘এ সমস্যা সম্পর্কে আমরা জানি। এখানে মিথেনের সবচেয়ে বড় অংশ আসছে ধানক্ষেত থেকে। কৃষকরা যখন তাদের জমিতে সেচ দিয়ে ভাসিয়ে দেন, তখন মাটিতে থাকা ব্যাকটেরিয়া প্রচুর পরিমাণে মিথেন গ্যাস নিঃসরণ করে।
এ ছাড়া এই গ্যাসের আরেকটি উৎস মাটিতে থাকা বা খনিজ গ্যাস। উপরের বিভিন্ন জিনিসের স্তর ভেঙে যাওয়ার ফলে এসব গ্যাস উন্মুক্ত হয়ে পড়ে। আমরা এ বিষয়টিকে প্রশমনের জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’ তার মতে, গৃহপালিত পশু, তেল ও গ্যাসক্ষেত্রের লিক, ভূমিতে আবদ্ধ গ্যাস এবং কয়লা খনি থেকেও মিথেন গ্যাস নিঃসরিত হয়।