১।
ইখতিয়ার উদ্দীন মুহাম্মাদ বিন বখতিয়ার খিলজীর অভিযানের পর এই অঞ্চলের পৌত্তলিক শক্তি কখনোই মুসলিমবঙ্গকে পরাজিত করতে পারেনি।
সুলতানী আমলে সাময়িকভাবে গণেশের শাসন ছিল, কিন্তু সেটা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি।
পলাশীতে আমাদের পরাজিত করেছে ফিরিঙ্গিরা।
চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত ও সূর্যাস্ত আইন বানিয়েছে ফিরিঙ্গিরা। ওয়াকফ বাজেয়াপ্ত করেছে ফিরিঙ্গিরা।
প্রশাসনিক ভাষা ইংরেজি বানিয়ে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমাদের বাদ দিয়ে দুর্বল করেছে ফিরিঙ্গিরা।
আমাদের ওপর কুফরি শাসন ব্যবস্থা চাপিয়ে দিয়ে গেছে ফিরিঙ্গিরা।
ফিরিঙ্গিরা যখন আমাদের পরাজিত করেছে তখন তাদের জুনিয়র পার্টনার হিসেবে নব্য জমিদার শ্রেনী হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে পৌত্তলিকরা। তারা আমাদের পরাজিত করতে পারেনি। তবে নেকড়ে হত্যা করে, শকুন মরার মাংস খায়।
২।
ফিরিঙ্গিদের পৃষ্ঠপোষকতায় কংগ্রেস পার্টি তৈরি হয়েছে যা নিরপেক্ষতার নামে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেছে।
এই ভারসাম্যহীনতা মোকাবেলা করতে গিয়ে মুসলিম লীগ হয়েছে। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-র স্লোগানে, অসংখ্য মানুষের কুরবানীর পর পাকিস্তান রাষ্ট্র হয়েছে।
কিন্তু সেই রাষ্ট্র ফিরিঙ্গিদের কুফরি ব্যবস্থা আর আইনের বাইরে যায়নি। স্রেফ হিন্দুবিরোধী সেন্টিমেন্ট বা তথাকথিত “মুসলিম জাতীয়তাবাদ” আমাদের কুরআনের শাসন দিতে পারেনি।
মুসলিম লীগ বলুন, আইয়ুব বলুন, ইয়াহিয়া বলুন কিংবা দিল্লীর দাসী হাসিনা বলুন – এরা কেউ গীতার আইন কিংবা বেদের বিধানের নামে আপনার ওপর যুলুম করেনি। এরা তা করেছে ফিরিঙ্গিদের রেখে যাওয়া ব্যবস্থা আর আইনের নামে।
একজন মুসলিম বৈদিক কোনো ব্যবস্থা বা আইন গ্রহণ করে নেবে, এটা সম্ভব না। কিন্তু আজ কোটি কোটি মুসলিম ফিরিঙ্গিদের কাছ থেকে আসা আইন, মতবাদ এবং শাসনব্যবস্থাকে গ্রহণ করে নিয়েছে। শুধু তাই না, অনেকে এগুলোর ইসলামীকরণকে নিজেদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হিসেব গ্রহণ করেছে।
ফিরিঙ্গিদের তৈরি, তাদের অনুগত বাহিনীগুলো আমাদের সেনাবাহিনীতে পরিণত হয়েছে।
ফিরিঙ্গিদের তৈরি, তাদের অনুগত আমলাতন্ত্র, আমাদের আমলাতন্ত্রে পরিণত হয়েছে।
ফিরিঙ্গিদের আইন, তাদের নিযাম আমাদের আইন আর নিযামে পরিণত হয়েছে।
অতীতে দুই ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব হলে তারা নিজেরা সেটার সমাধান করে নিতো, শান্তিপূর্ণভাবে অথবা অন্য কোন পন্থায়।
আজ মীমাংসার কর্তৃপক্ষ বানানো হয়েছে সেক্যুলার রাষ্ট্রকে। যে সেক্যুলার রাষ্ট্র আপনার বিরুদ্বে বায়াসড, যে আপনার অবস্থানকে ক্রিমিনালাইয করে, এবং বিপরীত পক্ষকে প্রিভিলেজ দেয়।
৩।
ইসকনের বিরুদ্ধে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আর্থিক এবং যৌন কেলেঙ্কারির প্রমান আছে। বাংলাদেশেও ইসকনের বিভিন্ন নেতার বিরুদ্ধে যৌন আগ্রাসনের অভিযোগ আছে।
এদের সাথে পশ্চিমা বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সম্পর্কের অভিযোগ আছে।
দেশের হিন্দুদের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে নানা ধরণের অভিযোগ আছে।
বাংলাদেশে ইসকনকে আরেসেস অর্থ দিয়েছে এবং অভিযোগ এসেছে হিন্দুত্ববাদী দলের নেতার কাছ থেকেই।
এদের বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যার হুমকি, উস্কানিসহ অনেক অভিযোগ আছে।
কিন্তু এই রাষ্ট্র, প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে তদন্তও করে না। কিন্তু কোন বোকা মুসলিম খেলনা পিস্তল নিয়ে নিরীহ প্রতিবাদ সমাবেশ করতে গেলে রাষ্ট্র তাকে গ্রেফতার করে ফেলে।
অপরাধ হলে সে তা থামায় না, বিচারও করে না। কিন্তু আপনি বিচার চাইলে, প্রতিবাদ করলে সে আপনাকে অপরাধী বানায়। গুম করে, নির্যাতন করে, খুন করে।
আপনাকে যখন আঘাত করা হয়, তখন সে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে। আপনি যখন আত্মরক্ষা করতে চান তখন সে আপনার হাত পা দড়ি দিয়ে বেঁধে ফেলে।
এখন দয়া করে আমাকে বুঝিয়ে বলুন:
গায়রুল্লাহর এই নিযামকে এভাবে এই অবস্থায় রেখে দিয়ে আপনি কিভাবে শত্রুর মোকাবেলা করবেন? কিভাবে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবেন?
৪।
ফিরিঙ্গিদের রেখে যাওয়া কুফরি নিযাম উৎখাত না করলে হিন্দুত্ববাদী আগ্রাসন এবং ভারতীয় সম্প্রসারণবাদের মোকাবেলা করা সম্ভব না।
নিরেট ‘অ্যান্টি-হিন্দু” সেন্টিমেন্ট আপনাকে বেশি থেকে বেশি হলে পাকিস্তান ২.০ উপহার দেবে। আর মুমিন এক গর্ত থেকে দুইবার দংশিত হয় না।
আমাদের সমাজের প্রধান দ্বন্দ্ব হল ইসলামী ব্যবস্থা এবং সেক্যুলার ব্যবস্থার দ্বন্দ্ব। আল্লাহর আইন বনাম গায়রুল্লাহর আইনের দ্বন্দ্ব। এটিই আমাদের সময়ে এবং সমাজে ইসলাম ও জাহেলিয়াতের চিরন্তন দ্বন্দের ম্যানিফেস্টেশন। রাজনৈতিক সঙ্কট, সামাজিক অবক্ষয়সহ প্রায় সব সংকট এই প্রধান দ্বন্দ্বের উপসর্গ।
এই দ্বন্দ্বের সমাধান না করলে আপনি হিন্দুত্ববাদী প্রকল্পের সামনে মাটিতে ফেলে রাখা হাত-পা বাঁধা ভেড়ার মতোই থেকে যাবেন।
ওয়ামা ‘আলাইনা ইল্লাল বালাগ্ব
© Asif Adnan
