অক্সিজেন, অক্সিজেন, আপনি কি আমাকে অক্সিজেন দিতে পারেন? এভাবেই আবেদন করছিলেন যন্ত্রণায় কাতর এক স্কুলশিক্ষিকা। কারণ তার স্বামী (৪৬) দিল্লির অক্সিজেন নেই এমন একটি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। দিল্লির মতো এমন একটি শহর এখন অনেকের জন্যই শ্বাস নেয়া বিলাসবহুল ব্যাপার।
ওই শিক্ষিকা বিবিসির প্রতিবেদককে বললেন, স্যাচুরেশন বেড়ে যাওয়ায় তিনি খুশি। তার স্বামীর এখনো জ্ঞান আছে ও তিনি কথা বলছেন।
ওই প্রতিবেদক বলছিলেন, করোনা রোগীদের জরুরি চিকিৎসায় কাজ করছে আমার এ রকম এক চিকিৎসক বন্ধুকে টেক্সট মেসেজ পাঠালাম। ওই বন্ধু আমাকে মেসেজের জবাব দিলেন, স্যাচুরেশন ৪০-এর নিচে নেমে গেলে রোগী প্রচুর কথা বলে।
পত্রিকার রিপোর্টে বলা হয়েছে, তাদের একজনের ৪০ বছর বয়সী এক ছেলে মাত্র কয়েক দিন আগে একই হাসপাতালের সামনে মারা গেছেন, যিনি একটি শয্যার জন্য সেখানে অপেক্ষা করছিলেন। তবে তিনি একটি স্ট্রেচার সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছিলেন।
ভারতীয়রা এখন এসব পেলেই কৃতজ্ঞ। তাদের কথা হলো প্রিয়জনকে বাঁচাতে হাসপাতালের বেড অথবা ওষুধ কিম্বা অক্সিজেন দিতে না পারলেও অন্তত লাশ রাখার জন্য চাকাওয়ালা একটি স্ট্রেচার তো দিতে পারেন।
বিবিসির ওই প্রতিবেদক বললেন, ওই শিক্ষিকা আবার ফোন দিলেন। অক্সিজেন মাপার জন্য হাসপাতালের অতিরিক্ত কোনো ফ্লোমিটার নেই। ফলে তার নিজেকেই এটি যোগাড় করতে হবে। সিলিন্ডার থেকে রোগীকে যখন অক্সিজেন দেয়া হয় তখন এই যন্ত্রটি দিয়ে অক্সিজেনের সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। আমরা ফোনে লোকজনের সাথে যোগাযোগ করলাম। টুইটারে আবেদন জানালাম। কেউ একজন এই যন্ত্রটি সংগ্রহ করতে সক্ষম হলেন।
‘সরকার যা কিছুই বলুক না কেন, পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। রোগীদের বাঁচাতে অক্সিজেনের ট্যাংকার সময় মতো শহরে আসতে পারছে না। হাসপাতালে কোনো বেড নেই। নেই ওষুধও। এমনকি ভারতের বিত্তবান শ্রেণী তাদের সামনেও এখন এসব সুবিধা নেই।’ বলিছিলেন এই প্রতিবেদক।
তিনি বলেন, একটি ম্যাগাজিনের সম্পাদক দুপুর বেলা আমাকে ফোন করলেন। তিনিও তার পরিচিত অসুস্থ এক রোগীর জন্য অক্সিজেনের সিলিন্ডার খুঁজছেন। আমি যে অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে থাকি, তার বাসিন্দারা জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য কিছু অক্সিজেন কনসেনট্রেটর (আশপাশের বাতাস থেকে অক্সিজেন সংগ্রহের যন্ত্র) কেনার চেষ্টা করছেন। এই ভবনে ৫৭ জন বাসিন্দা আক্রান্ত হয়েছে ও তাদেরকে বাড়িতে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।
নিউরোসার্জন পল কালানিথি তার ‘হোয়েন ব্রেথ বিকামস এয়ার’ গ্রন্থে বলেছেন, ‘যদি আমি মারা যেতে থাকি, আমার মৃত্যু হওয়ার আগ পর্যন্ত আমি কিন্তু বেঁচে আছি।’
আজকের ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মুমূর্ষু এই রোগীদের জন্য যেন খুব সামান্যই মুক্তি অপেক্ষা করছে।
সূত্র : বিবিসি