Friday, December 6, 2024
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমদৈনন্দিন খবরশীর্ষ ৮০ খেলাপিতে দিশেহারা রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক

শীর্ষ ৮০ খেলাপিতে দিশেহারা রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন: ছয় মাসের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ১২ শতাংশ, ঋণের অর্থ আদায় ০.২৪, ০.৪৭, ১.৯৪ ও ৩.২৮ শতাংশ * একদিকে টার্গেট, অন্যদিকে উৎসাহ দেয়া হচ্ছে- দ্বিমুখী নীতি দিয়ে খেলাপি আদায় সম্ভব নয় -ড. মইনুল ইসলাম * শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠনের পরামর্শ খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদের

শীর্ষ ৮০ ঋণখেলাপির কাছে রীতিমতো জিম্মি হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত চারটি ব্যাংক। কোনো পদক্ষেপেই সুফল আসছে না। আদায় করতে পারছে না ঋণের টাকা।

সর্বশেষ গত ছয় মাসে এসব ঋণখেলাপির কাছ থেকে অর্থ আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সাড়ে ১২ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু সেটি অর্জনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে ব্যাংকগুলো। লক্ষ্যমাত্রার ধারেকাছেও পৌঁছাতে পারেনি। বেঁধে দেয়া সময়ের মধ্যে দুটি ব্যাংকের অর্জন মাত্র শূন্য দশমিক ২৪ ও শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ। আর অপর দুটির আদায় ১ দশমিক ৯৪ ও ৩.২৮ শতাংশ।

সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও বিআইবিএম’র সাবেক মহাপরিচালক ড. মইনুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, খেলাপি ঋণ আদায়ে এখন যেসব পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে তা লোক দেখানো। একদিকে খেলাপি ঋণ আদায়ের টার্গেট দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে ঋণখেলাপিদের উৎসাহ দিচ্ছে সরকার।

এ ধরনের দ্বিমুখী নীতি দিয়ে খেলাপি ঋণ আদায় করা সম্ভব নয়। সবচেয়ে বড় কথা হল, শীর্ষ পর্যায়ের খেলাপিদের থেকে টাকা আদায়ে সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ যুগান্তরকে বলেন, শীর্ষ খেলাপি থেকে টাকা আদায় না হওয়ার দায় কেউ এড়াতে পারেন না। সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়- সব পক্ষকে এ দায় নিতে হবে।

বিশেষ করে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায় সবচেয়ে বেশি। কারণ সরকারি ব্যাংকে বড় ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে কখনও কখনও তারা তদবিরও করেন। এখন শুধু টার্গেট দিলে হবে না। এসব খেলাপি ঋণ আদায়ে শক্তিশালী টাস্কফোর্স গঠন করতে হবে। এতে সব পক্ষের লোক থাকবে। টাকা আদায় করলে পুরস্কার আর আদায় না করতে পারলে শাস্তিরও বিধান রাখতে হবে।

বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, শীর্ষ ঋণখেলাপিদের কাছে ব্যাংকগুলো কিছুটা জিম্মিও বলা যায়। আবার ব্যাংকের ভেতরে ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের লোক আছেন। এসব লোক খেলাপিদের পক্ষ নিয়ে কাজ করেন। অর্থাৎ ‘শর্ষের মধ্যেও ভূত’ আছে। সে ভূত তাড়াতে না পারলে টাকা আদায় হবে না। তাই খেলাপিরা বাইরে থেকে দাপট দেখান।

তা না হলে একই বাজারে কাজ করে সরকারি ব্যাংকের গড় খেলাপি ঋণ ৫০ শতাংশের ওপরে আর বিদেশি ব্যাংকের গড় খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে- এই ব্যবধান থাকত না। এছাড়া খেলাপি ঋণ আদায়ে বাস্তবিক অর্থে কোনো পরিবেশ নেই। অনেক ক্ষেত্রে ঋণখেলাপিরা উৎসাহিত হচ্ছেন। এ ধরনের বহুবিধ সমস্যায় জর্জরিত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের শুরুতে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংককে শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে ২৫০ কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা (সাড়ে ১২ শতাংশ) নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ আদায় করেছে ব্যাংকটি। যার অঙ্ক ৪ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।

একইভাবে লক্ষ্যমাত্রার শূন্য দশমিক ২৪ শতাংশ আদায় করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত আরেকটি ব্যাংক। বছরব্যাপী শীর্ষ ২০ খেলাপি থেকে ১ হাজার কোটি টাকা আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও প্রথম ছয় মাসে মাত্র দুই কোটি ৪০ লাখ টাকা আদায় করেছে ব্যাংকটি। এছাড়া ২০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে ৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা আদায় করেছে সরকারি অপর একটি ব্যাংক।

যা লক্ষ্যমাত্রার ৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। রাষ্ট্রায়ত্ত খাতের আরও একটি ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩৫০ কোটি টাকা। কিন্তু আদায় হয়েছে ১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার শূন্য দশমিক ৪৭ শতাংশ।

ওই প্রতিবেদনে দেখা যায়, সার্বিক খেলাপি ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক। প্রত্যেক ব্যাংককে ছয় মাসে সাড়ে ১২ শতাংশ আদায়ের লক্ষ্য দেয়া হলেও একটি ব্যাংকের অর্জন মাত্র ৪ শতাংশ, আরেকটির সাড়ে ৪ এবং অপর দুটির ৯ দশমিক ৬৭ ও ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

এছাড়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বড় গ্রাহকের অনুকূলে ৩ হাজার ১৮০ কোটি টাকার ‘ফোর্সড লোন’ তৈরি করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংক। উল্লেখ্য, ব্যাংকে আগের ঋণ পরিশোধে গ্রাহকের নামে নতুন ঋণ সৃষ্টি করাকে ‘ফোর্সড লোন’ বলা হয়। বৈদেশিক বাণিজ্যে আমদানি-রফতানি উভয় ক্ষেত্রে ফোর্সড লোনের ব্যবহার রয়েছে। অধিকাংশ ফোর্সড লোনে অনিয়ম হয়। গ্রাহক খুঁজে পাওয়া যায় না।

ফলে টাকা আদায়ের সুযোগ থাকে না। এক পর্যায়ে এসব ফোর্সড লোন খেলাপিতে পরিণত হয়। পরে ঋণ অবলোপন করে মূল হিসাব থেকে তা সরিয়ে নেয়া হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ৯১৫টি শাখার মাধ্যমে ব্যবসা করছে রাষ্ট্রায়ত্ত একটি ব্যাংক। চলতি বছরের জুন পর্যন্ত এসব শাখা ঋণ বিতরণ করে ৫২ হাজার ৩৩৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৪০ হাজার ২৭০ কোটি টাকাই বিতরণ করা হয় মাত্র পাঁচটি শাখা থেকে।

যা বিতরণকৃত মোট ঋণের ৭৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। শুধু তাই নয়, গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির ৭৯টি শাখা লোকসানে পড়েছে। যা গত ডিসেম্বরে ছিল ৫০টি। সে হিসাবে ছয় মাসের ব্যবধানে এ ব্যাংকে লোকসানি শাখা বেড়েছে ২৯টি।

জানতে চাইলে জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার মোহাম্মদ নুরুল আমিন যুগান্তরকে বলেন, সাধারণত গ্রামের শাখার তুলনায় শহরের শাখায় ঋণ বেশি বিতরণ করা হয়। এ ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যবধান থাকে। তবে অযৌক্তিক ব্যবধান নিঃসন্দেহে ক্ষতির কারণ। সর্বোপরি গুটিকয়েক শাখায় প্রায় সব ঋণ কেন্দ্রীভূত হয়ে গেলে সেক্ষেত্রে খেলাপি ঋণের ঝুঁকি বাড়ে। বিষয়টি মাথায় রেখে ঋণ ব্যবস্থাপনা সাজানো উচিত। তা না হলে ঝুঁকি এড়ানো যাবে না।

প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, চলতি বছরের জুন শেষে ২৯ হাজার ৭৬১ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত আরেকটি ব্যাংক। এর মধ্যে মাত্র ৫ শাখার মাধ্যমে বিতরণ হয়েছে ২০ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা। মোট ঋণের ৬৮ দশমিক ৬৮ শতাংশই বিতরণ হয়েছে মাত্র পাঁচটি শাখার মাধ্যমে। গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির ১৬টি শাখা লোকসানে পড়ে। যা গত ডিসেম্বরে ছিল ১১টি।

সে হিসাবে ছয় মাসে এ ব্যাংকের লোকসানি শাখা বেড়েছে ৫টি। এছাড়া ৫ শাখার মাধ্যমেই ৫৩ দশমিক ১৭ শতাংশ ঋণ দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত অপর একটি ব্যাংককেও। মোট ঋণের পরিমাণ ৪২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা। মোট বিতরণকৃত ঋণের বিপরীতে মাত্র ৫ শাখার মাধ্যমে বিতরণ হয়েছে ২২ হাজার ৬১৯ কোটি টাকা। গত জুন পর্যন্ত ব্যাংকটির ৭৮টি লোকসানে পড়েছে। যা গত ডিসেম্বরে ছিল ১৮টি। সে হিসাবে মাত্র ৬ মাসে এ ব্যাংকের লোকসানি শাখা বেড়েছে ৬০টি শাখা। যা খুবই উদ্বেগজনক।

চলতি বছরের জুন পর্যন্ত ৪৭ হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা বিতরণ করেছে অন্য একটি সরকারি ব্যাংক। যা ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের ৩৪ দশমিক ২৬ শতাংশ। ৫ শাখার মাধ্যমে ব্যাংকটির বিতরণ হয়েছে ১৬ হাজার ৩৩২ কোটি টাকা। অথচ ব্যাংকটির মোট শাখা সংখ্যা ১ হাজার ২২৫টি। এ সময়ে ব্যাংকের ৫০টি শাখা লোকসানে পড়েছে। যা গত ডিসেম্বরে ছিল মাত্র ২৭টি। সে হিসাবে মাত্র ৬ মাসের ব্যবধানে এ ব্যাংকের লোকসানি শাখা বেড়েছে ২৩টি।

জানা গেছে, ৮ অক্টোবর বাংলাদেশ ব্যাংকে এক বৈঠকে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর লোকসানি শাখা বেড়ে যাওয়ায় গভর্নর ফজলে কবির উদ্বেগ প্রকাশ করেন। একই সঙ্গে ব্যাংকগুলোর লোকসানি শাখা আরও দ্রুত কমিয়ে আনার নির্দেশ দেন তিনি।

এ সময় সরকারি ব্যাংকগুলোতে গুটিকয়েক শাখায় বেশির ভাগ ঋণ কেন্দ্রীভূত হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেন গভর্নর। কোনোভাবে যেন ঋণ এককেন্দ্রিক হয়ে না যায় সে বিষয়ে সব ব্যাংককে সতর্ক করার পাশাপাশি ঋণ বিকেন্দ্রীকরণে পরামর্শ দেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

16 − twelve =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য