করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ১৯ মুসলিমের মৃতদেহ পরিবারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে পুড়িয়ে ফেলা হবে বলে বুধবার জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা। সরকারের তরফ থেকে দাবি করা হয়েছে, মৃতদেহগুলো পরিবার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাই এগুলো পুড়িয়ে ফেলা হবে। কিন্তু দেশটির মুসলিমরা বলছেন ভিন্ন কথা। অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন গত মাসে সরকারের কাছে অনুমোদন চেয়েছে যাতে মৃতদেহগুলো পরিবারের সদস্যদের দাফন করার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট সেই আবেদন প্রত্যাখ্যান করেছে। বৌদ্ধপ্রধান এই দেশটিতে একটি ভ্রান্ত ধারণা প্রচলিত আছে। তা হলো- করোনায় মৃত ব্যক্তিদের দাফন করা হলে তা থেকে ভূগর্ভস্থ পানি সংক্রমিত হবে এবং এর মাধ্যমে করোনার বিস্তার ঘটবে। উল্লেখ্য, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মৃতদেহ দাফন এবং দাহ দু’টি পদ্ধতিকেই অনুমোদন দিয়েছে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন উইঅন এবং নিউজ-১৮। এতে বলা হয়েছে, সরকার বুধবার ঘোষণা দিয়েছে ওই ১৯টি মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলবে। সরকারের এমন বিতর্কিত নীতির বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে এ পর্যন্ত মুসলিম ও নাগরিক অধিকার বিষয়ক গ্রুপগুলো সুপ্রিম কোর্টে ১২টি আবেদন করেছে। কিন্তু কোনো কারণ না দেখিয়েই গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট সব আবেদনই প্রত্যাখ্যান করেছে। এর ফলে সরকার মর্গে থাকা মৃতদেহগুলো পুড়িয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অক্টোবর থেকে এই দেশটিতে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আক্রান্তের সংখ্যা তখন থেকে কমপক্ষে ৮ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মোট আক্রান্ত হয়েছেন ২৯ হাজার ৩০০ মানুষ। মারা গেছেন ১৪২ জন। কিন্তু নিউজ ১৮ বলছে, করোনাভাইরাসে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মৃতদেহ স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্তৃপক্ষের কঠোর নজরদারির অধীনে পুড়িয়ে ফেলা হয়, যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু অ্যাটর্নি জেনারেল ডাপ্পুলা ডি লিভেরা বলেছেন, করোনায় মারা যাওয়া ১৯ জন মুসলিমের মৃতদেহ রাখা হয়েছে রাজধানী কলম্বোতে একটি মর্গে। এসব মৃতদেহ তাদের পরিবার গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তাই যেসব মৃতদেহ পরিবার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তা পুড়িয়ে ফেলা যায় বলে তিনি দাবি করেন। তিনি উল্লেখ করেন, এর মধ্যে এ সপ্তাহে ৫টি মৃতদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এ কথারই সাক্ষ্য দিয়েছে পুলিশ। তারা বলেছে, বুধবার ওই ৫টি মৃতদেহ পোড়ানো হয়েছে। ফলে বাকিদের মৃতদেহও পুড়িয়ে ফেলা হবে।
শ্রীলঙ্কা মুসলিম কাউন্সিল বলেছে, দেশে করোনাভাইরাসের শিকার ব্যক্তিদের বেশির ভাগই মুসলিম। এই কাউন্সিলের একজন মুখপাত্র বলেছেন, যদি কোনো মুসলিমের করোনাভাইরাস পজেটিভ ধরা পড়ে তাহলে ভয়ে তিনি মেডিকেল সাহায্য বা চিকিৎসা চান না। কারণ, তার ভয়, মারা গেছে তাকে পুড়িয়ে ফেলা হবে।
ওদিকে গত এপ্রিলে শ্রীলঙ্কায় করোনায় মারা যাওয়াদের মৃতদেহ বাধ্যতামূলকভাবে পুড়িয়ে ফেলার নীতি গ্রহণ করা হয়। এ উদ্যোগে সমর্থন করেন প্রেসিডেন্ট গোটাবাইয়া রাজাপাকসে। উল্লেখ্য, ২০১৯ সালে ইস্টার উৎসবের সময় বোমা হামলায় বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি হয় সেখানে। এর জন্য স্থানীয় জিহাদিদের দায়ী করা হয়। তখন থেকেই দেশটিতে মুসলিম সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগরিষ্ঠ সিংহলীদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। দেশটিতে মোট ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে মুসলিম আছে শতকরা প্রায় ১০ ভাগ।