আড়ং এর ঘটনা কি সত্যিই বাংলাদেশে নতুন!!!আজ থেকে চার বছর আগে ঠিক আজকের দিনেই ইসলাম গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেই আমি। সিদ্ধান্ত সবাইকে জানানোর আগে আমার ধারণা ছিল পরিবার থেকে মেইন বাঁধাটা আসবে। তাই খুব দোয়া করছিলাম আল্লাহ যেন পরিবারে এটা সহজ করে দেন। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ পরিবারে এতটাই সহজ করে দিলেন যে আর কোন বাঁধাই থাকলো না। এর দেড় মাস পর অফিসে যোগদান করলাম। কাগজপত্র, দৌড়া দৌড়ি, ইসলামিক লেখাপড়া সব একসাথে চলছিল। রমাদান সেবার জুনে শুরু হবে। আমার ভয় জীবনে প্রথমবার টানা এতগুলো রোযা রাখতে পারবো তো!!! আল্লাহ! যদি না পারি, একটা রেখে যদি অসুস্থ হয়ে যাই। এসব সাত পাঁচ ভেবে শাবানেই রোযা রাখা শুরু করলাম যেন রমাদানে কেমন থাকি বুঝতে পারি, কোন রোযা বাদ না যায়, আলহামদুলিল্লাহ। তখনও শাবানের রোযার ফজীলত জানতাম না। মহামানব আসলে সকল মানবের গতিবিধি জানতেন বলেই এত মাধূর্যময় সুন্নাহ রেখে গেছেন। শাবানের রোযার ফজীলত জেনে রাসূলের প্রতি ভালোবাসা আরো বেড়ে গেল। হায়, ১৪০০ বছর আগেই তিনি আমার মনের শঙ্কা জানতেন জীবনের প্রথমবারের মতো রোযা রাখার অনুভূতিগুলো আল্লাহর আরো সন্নিকটে নিয়ে গেল আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ভালোবাসার ফলস্বরূপ শাবানেই প্রথম হিজাব করার সিদ্ধান্ত নিলাম। ইসলামে নারীদের চুল ও সতর ঢাকা কুরআনের আলোকেই ফরজ। এতদিন কোন সমস্যা না হলেও প্রথম অনুভব করলাম আমার মেইন যুদ্ধটা আসলে পরিবারে ছিল না, ছিল পরিবারের বাইরে। আল্লাহর বিশেষ রহমত যে আমার কর্মস্থল এমন একটা জায়গায় যেখানে একজন শিক্ষকের খুব বেশি হায়ারার্কির হাতের পুতুল হতে হয় না। আমরা মোটামুটি অন্য যেকোন প্রতিষ্ঠানের চেয়ে মত প্রকাশ ও পালনে স্বাধীন, যা বাংলাদেশের অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানেই নেই। সেই কর্মস্থলেই আমি এত রকম বাঁধার সম্মুখীন হয়েছি, এত প্রতিবন্ধকতা এসেছে শুধু মাত্র হিজাব ও বোরকা পড়ার কারনে, অন্য যে কোন মুসলিমের পক্ষেও তা সহ্য করে টিকে থাকা কঠিন ছিল, আমার মতো রিভার্টেড যার নিজের পরিবার বলতে কিছুই অবশিষ্ট নেই, কর্মস্থলই একটা পরিবারের মতো তার পক্ষে সহ্য করা অসম্ভবই ছিল। যাইহোক, রমাদান পর্যন্ত সেরকম প্রেশার না এলেও রমাদান পার হওয়ার পর শুরু হল হিজাব যুদ্ধ। এখানে কেউ আড়ং এর মতো বোকা না, সরাসরি বলে দেবে, বরং উচ্চশিক্ষিতের বাঁধাও অনেক উচ্চাঙ্গ! যাই হোক সে যাত্রায় টিকতে পারলাম না। হিজাব পড়া ছাড়ার মধ্যেই সময় চলতে থাকলো। রেগুলার পড়ি, অনুষ্ঠানগুলোতে সবার মতো। এভাবে অনেকদিন পাড় হওয়ার পর একদিন আল্লাহর কাছে কাঁদছিলাম একটা জিনিসের জন্য। আর মনে মনে ভাবছিলাম আল্লাহ আমি ওয়াদা করছি, আর হিজাবের বরখেলাপ করবো না। আলহামদুলিল্লাহ কয়েক মিনিটের মাঝেই আল্লাহ একটা না দ্বিগুণ খুশি ফেরত দিলেন, আর আমিও হিজাবে স্থায়ী হয়ে গেলাম।এবারশুরু হল প্রত্যক্ষ বাঁধা। কাল থেকেই কাঠমোল্লার চেহারা থেকে বের হয়ে আসতে হবে, আগে যেমন চলতে তেমনই চলতে হবে। মুসলিমরাও কেউ তোমার মতো পর্দা করে না।।জঙ্গী, ইরানী, আফগানি কত কি।।আমি কি করে বোঝাই, এ তো আল্লাহর সাথে আমার সম্পর্ক, এ তো আল্লাহকে সন্তুষ্ট করতে চাওয়ার একটা পোষাক মাত্র। আমি ওয়াদা করা মাত্র আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে আমাকে একটা জিনিস চাওয়ার বিনিময়ে দুটো সৌভাগ্য দান করেছেন মুহূর্তেই। এ তো কোন বাঁধার সামনে নত হবার নয়।আমার আনন্দ আল্লাহ আমাকে সামান্য একটু ত্যাড়া করে বানিয়েছেন আর হেদায়েতের পথে সবসময় সাহায্য করেছেন বলেই সে যাত্রায় শুধু টিকলামই না, বরং যেদিন হিজাব ছাড়তে বলা হল সেদিনই বাজারে গিয়ে কাপড় কিনে এক রাতের মাঝে বোরকা সেলাই করিয়ে সকালে অফিস করলাম আলহামদুলিল্লাহ।।। আল্লাহর পথে যেকোন প্রতিবন্ধকতা, যে কোনও বাঁধাও যে নেয়ামত সেদিন টের পেলাম আলহামদুলিল্লাহ। নয়তো এই পরিবেশে বোরকা শুরু করতে আরো দেরিও হতে পারতো!!এক বোরকার জন্য কত অপমান সহ্য করতে হয়েছে প্রতিনিয়ত, কত খোঁচা শুনতে হয়েছে, কত অবজ্ঞা সহ্য করতে হয়েছে, কত হক কেড়ে নেয়া হয়েছে, কতটা আলাদা জীবন যাপন করতে হয়েছে তা আমি জানি। তবে ৯০ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত দেশে আমাকে এসব সহ্য করতে হবে তা আমার ধারণার বাহিরে ছিল। অথচ এ দেশেই আমাদের পর্দাসহ সুন্নাহ পালন সহজ হওয়ার কথা ছিল!!! তবে বাঁধা মানুষকে নিজের ঈমান চিনতে সাহায্য করে। গত চার বছরের সব বাঁধার কথা যখন ভাবি, নিজের ঈমানকে আরো সুদৃঢ় অবস্থানে খুঁজে পাই। আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দুনিয়ার সন্তুষ্টি নস্যি। দুনিয়ার সাফল্য তো সাময়িক, আজ আছে কাল নেই, তাই কি হবে একটা চাকরি না পেলে, বা হক থেকে কেউ বঞ্চিত করলে, বা দুটো কথা শোনালে, সমাজের কাছে গৃহীত না হলে, আড়ং এ শপিং না করলে!!!আসুন আল্লাহকে ভালোবেসে, রাসূলের সুন্নাহকে ভালোবেসে এবারের ঈদটা আড়ংবিহীন ঈদ হিসেবে উদযাপন করি। সেদিনই আড়ং এ যাই যেদিন ওদের সব পুরুষ বিক্রয়কর্মী দাড়ি রাখবে আর নারী বিক্রয়কর্মী হিজাব পড়বে, তার আগে নয়দুনিয়া তো সাময়িক, আল্লাহর ওয়াদাই তো সর্বোত্তম, চিরস্থায়ী