যারা কোরআনের একটি অক্ষর, শব্দ, বাক্য তথা আয়াত বিকৃত, পরিবর্তন কিংবা বাদ দেয়ার ধৃষ্টতা প্রদর্শন করে বা দাবি জানায়, সে সন্দেহাতীতভাবে বর্ণিত শ্রেণিগুলোর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে কি-না, সে সিদ্ধান্ত বা ফতোয়া দেবেন ইসলামী শরীয়তের মুফতীগণ। কোনো মুসলমানের পক্ষে এরূপ ধৃষ্টতা প্রদর্শন করা সম্ভব নয়। যদি মুসলমান নামধারী কোনো ব্যক্তি এরূপ দুঃসাহস করে তবে তার কঠোর শাস্তির বিধান ইসলামে রয়েছে।
দুনিয়ার সকল ধর্মের অনুসারীদের স্বতন্ত্র বিচারবিভাগ তথা আইন-আদালত রয়েছে। যে কোনো বিষয়ে চ‚ড়ান্ত রায়ের জন্য সর্বোচ্চ আদালত বা সুপ্রিম কোর্ট মানুষের আশা, ভরসা ও ন্যায়বিচার লাভের একমাত্র কেন্দ্রস্থল, সর্বোচ্চ সম্মানিত স্থান। এ মহান প্রতিষ্ঠানে সর্ব প্রকারের বিষয়ে মামলা রুজু করা যায় না, এমন বহু বিষয় আছে যেগুলো উত্থাপিত হবার সাথে সাথে খারিজ হয়ে যায়। বিশেষত: কোনো ধর্মের বা ধর্ম গ্রন্থের বিরুদ্ধে কেউ মামলা পেশ করতে চাইলে তা আদালতে গৃহীত না হওয়ার বহু দৃষ্টান্ত ইতিহাসে বিদ্যমান।
এ ধরনের মামলা উত্থাপনের আইনগত বাধা না থাকলেও সাম্প্রদায়িকতা উস্কে দেয়ার অভিযোগ আসাটা মোটেই অস্বাভাবিক ও অযৌক্তিক নয়। কেননা, এর ফলে ধর্মীয় হানাহানি ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা এমনকি রক্তারক্তির আশঙ্কা থেকে যায়। অথচ এ ধরনের অরাজকতা ও খুনাখুনি দমন করাটাই তো আদালতের মৌলিক করণীয়গুলোর অন্তর্ভুক্ত। কথাগুলো আমরা ধর্ম ও ধর্ম গ্রন্থগুলো সম্পর্কেই বলছি।
কারণ, কটাক্ষপাত, অসৌজন্য আচরণ, বিদ্রুপ, ইত্যাদি সাম্প্রদায়িক অশান্তি, বিশৃঙ্খলার জন্ম দেয়। কিন্তু তিক্ত হলেও সত্য ইসলাম ও ইসলাম ধর্মের কোরআন ও ইসলামের নবী (সা.)-এর বিরুদ্ধে দুনিয়ার নানা স্থানে নানা অপপ্রচার ও বিভ্রান্তি ছাড়ানোর ধারা অব্যাহত রয়েছে এবং বহু ক্ষেত্রে সরকারি তথা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতাও লক্ষ্য করা যায়।
আল কোরআন ঘোষণা করেছে, ‘ওয়ামান ইয়াবতাগি গাইরাল ইসলামি দীনান ফালান ইউকবালা মিনহু ওয়া হুওয়া ফিল আখিরাতি মিনাল খাসিরীন।’ অর্থাৎ যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো ধর্ম তালাশ করে কস্মিন কালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে হবে সে ক্ষতিগ্রস্ত। (সূরা আলে ইমরান : ৮৫)।
আয়াতটির তফসিরী ব্যাখ্যায় অনেক কথাই বলা হয়েছে। তবে আলোচনার সুবিধার্থে একটি তফসিরী ব্যাখ্যা এখানে উদ্ধৃত করা জরুরি। কোরআন বিকৃত বা কোরআনের কোনো আয়াতকে বাদ দেয়ার জন্য আইন-আদালতের আশ্রয় নেয়ার যে প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তার অর্থ হচ্ছে, কোরআনকে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানো। অর্থাৎ কোরআনের প্রবর্তক মহান আল্লাহকে মানুষের আদালতে বিচারের জন্য পেশ করা (নাউজুবিল্লাহ)।
উল্লেখিত আয়াতটির ব্যাখ্যা দেখা যাক। বলা হয়েছে, শেষনবী মুহাম্মদ (সা.)-কে যে ইসলাম দেয়া হয়েছে, তা অপরিবর্তনীয় এবং কিয়ামত পর্যন্ত স্থায়ী থাকবে। উল্লেখিত নীতি অনুযায়ী তার আবির্ভাবের পর পূর্ববর্তী সব ধর্ম রহিত হয়ে গেছে। এখন পূর্বেকার ইসলাম আর ইসলাম নয়, বরং- হুজুর (সা.)-এর মাধ্যমে যা পৃথিবীতে পৌঁছেছে, তাই হলো ইসলাম।
এ কারণেই বিভিন্ন সহীহ হাদীসে মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আজ যদি হজরত মূসা (আ.) জীবিত থাকতেন, তবে তার পক্ষেও আমার অনুসরণ করা ছাড়া গত্যন্তর ছিল না।’ অন্য এক হাদীসে বলেন, ‘কেয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে হজরত ঈসা (আ.) যখন অবতরণ করবেন, তখন নবুয়তের পদে সমাসীন থাকা সত্তে¡ও তিনি আমার শরীয়তেরই অনুসরণ করবেন।’ (তাফসীর মাআরেফুল কোরআন- বাংলা সংস্করণ, পৃষ্ঠা-১৯৩)