Monday, October 14, 2024
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমনিবন্ধ‘বাবা, আমাকে নামাজ পড়ার সময় দিতে হবে’

‘বাবা, আমাকে নামাজ পড়ার সময় দিতে হবে’

বুধবার বিকেল ৫টা। রাজধানীর শান্তিনগর থেকে যাবো বই মেলায়। সাথে সহকর্মী এক বড় ভাই। দু’জনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি রিকশায় যাবো। ভিকারুন্নেসা নূন স্কুলের সামনে থেকে এক রিকশাচালক চাচাকে ডাকলাম। চাচা যাবেন? চাচা বললেন, হ্যাঁ।

তবে রাজধানীর এই যানজটে দোয়েল চত্বর পর্যন্ত যেতে বেগ পেতে হবে আমাদের। লাগবে সময়ও। এ দিকে মুয়াজ্জিনের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে আযানের ধ্বনি। সময় হয়েছে নামাজের। এর মধ্যে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি দোয়েল চত্বর এলাকায় পৌঁছে নামাজ পড়বো।

চাচা বললেন, বাবা যাবো। তবে আমাকে নামাজের সময় দিতে হবে। কিছুটা বিস্মৃত হলাম। চাচার কথা শুনে অনেকটা ভালোও লাগলো। আমরাও বললাম, চাচা ঠিক আছে, নামাজটা পড়েই যাবো। সহকর্মী ভাই বললেন, চলেন এক সাথে জামাতে নামাজটা পড়ি।

এই প্রথম এমন কোনো রিকশাচালক পেলাম যিনি চলতি পথে নামাজের সময় চেয়েছেন। যাই হোক দু’জন মিলে উঠে পড়লাম রিকশায়। শান্তিনগর পার হয়ে একটি মসজিদের সামনে গিয়ে থামলেন চাচা। বললেন, বাবা আপনারা মসজিদে যান আমিও আসছি। নামাজ শেষ করে আবার উঠে বসেছি রিকশাতে। চলতি পথেই কথা হলো চাচার সাথে।

চাচার কথার ভঙ্গি আর আচরণে মনে হলো খুবই ধার্মীক একজন মানুষ। সবার সাথে মিশতেও পারেন সহজে। সহকর্মী বড় ভাই জিজ্ঞেস করলেন, চাচার পারিবারিক অবস্থার কথা। চাচার নাম মো: শাহজাহান বয়স ৬০ বছর (আনুমানিক)। থাকেন রাজধানীর মানিকনগরে। গ্রামের বাড়ি জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলায়।

দুই ছেলে তিন মেয়ে নিয়েই ছিল চাচার সুখের সংসার। এর মধ্যেই মৃত্যু হয় তার দুই ছেলের। এখন সংসারে আছে তার স্ত্রী ও তিন মেয়ে। তার স্ত্রী ও মেয়েরা জামালপুরে থাকলেও তিনি থাকেন ঢাকায়। রিকশা চালিয়েই চলে তার সংসার। তিন মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে এসএসসি পাস করেছে। মেজ মেয়ে পড়ে নবম শ্রেণীতে। আর সব থেকে ছোট মেয়ে পড়ে চতুর্থ শ্রেণীতে। তিন মেয়েকে নিয়ে ভালোই চলছিল সংসার। গ্রামে ছিল কিছু জায়গা জমিও। ২০ বছর আগে নদী ভাঙ্গনে ভিটে মাটিসহ হারিয়েছেন জমি-জমা।

সংসারের অভাব অনটন আর কষ্টটা একটু লাঘব করতে চাচা পাড়ি জমান রাজধানী ঢাকায়। এখানে জিবিকার তাগিদে শুরু করেন রিকশা চালানো। শুরুর দিকটা ভালো থাকলেও করোনাভাইরাস মহামারীতে পড়েন টানাপোড়নে। ছেলে, ভিটে-বাড়ি আর জমি-জমা হারিয়েও ভুলেননি মহান সেই পরোয়ার দিগারকে। শত কষ্টের মাঝেও সিজদায় অবনত হন রবের কাছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

9 + 8 =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য