বুড়িগঙ্গা নদীতে লঞ্চডুবির ঘটনায় করা মামলায় ময়ূর-২ লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন নৌ পুলিশ। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদ, ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন, সুপারভাইজার আবু সাঈদ, সেলিম হোসেন ও সালাম ময়ূর কম্পানির সার্বিক পরিচালনাকারী। তাঁদের ভুল দিকনির্দেশনা এবং পরিচালনাকারীদের ভুলে ৩৪ জন নিরীহ মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।
প্রায় আট মাসের তদন্ত শেষে গতকাল মঙ্গলবার ঢাকার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নৌ পুলিশের উপপরিদর্শক শহিদুল আলম এ অভিযোগপত্র দেন। আগামী ৯ মার্চ এ মামলার পরবর্তী দিন ধার্য রয়েছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা অন্য আসামিরা হলেন লঞ্চটির কর্মচারী দেলোয়ার হোসেন, আবু সাঈদ, সেলিম হোসেন, আবদুস সালাম, ইঞ্জিনচালক শিপন হাওলাদার, শাকিল হোসেন, লঞ্চের মাস্টার জাকির হোসেন, আবুল বাশার মোল্লা, সুকানি নাসির মৃধা ও কর্মচারী মো. হৃদয়। তাঁদের মধ্যে নাসির মৃধা ও মাস্টার আবুল বাশার মোল্লা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
মামলার অভিযোগপত্রে তদন্ত কর্মকর্তারা বলেন, লঞ্চমালিক কিছু কমোড ও মালামাল নামানোর জন্য ময়ূর কম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নির্দেশ দেন। যার কারণে তাড়াহুড়া করে লঞ্চটি বোগদাদিয়া ডকইয়ার্ড ছেড়ে টার্মিনালের দিকে রওনা হয়। সরকারি নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও লঞ্চমালিক বা অন্য কর্মকর্তারা যানটিতে অতিরিক্ত লোক নেন।
তা ছাড়া মাস্টার বা সুকানি হেলপার দিয়ে লঞ্চ চালানো দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, সার্ভে সনদ অনুযায়ী যাঁদের লঞ্চ পরিচালনার কথা ছিল, তাঁরা লঞ্চে ছিলেন না। আসামি আবুল বাশার, জাকির, নাসির, শিপন, শাকিল, হৃদয়ের দিকনির্দেশনায় এবং লঞ্চ চলমান থাকা অবস্থায় তাঁদের নির্দেশনা ভুল থাকায় লঞ্চের গতি ছিল অনেক বেশি। যেখানে গতি ধীর হওয়ার কথা সেখানে ফ্রন্ট গিয়ারে রেখে দ্রুত ও বেপরোয়াভাবে লঞ্চের গতি আরো বাড়িয়ে দেওয়া হয়; এটি দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ।
অভিযোগপত্রে আরো বলা হয়, লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ সোয়াদ, ম্যানেজার দেলোয়ার হোসেন, সুপারভাইজার আবু সাঈদ, সেলিম হোসেন ও সালাম ময়ূর কম্পানির সার্বিক পরিচালনাকারী। তাঁদের ভুল দিকনির্দেশনায় এবং পরিচালনাকারীর জন্যই একটি দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ায় ৩৪ জন নিরীহ মানুষের জীবন চলে গেছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘ভুক্তভোগী লঞ্চ মর্নিং বার্ডের মাস্টার সুকানিরা বারবার সংকেত দেওয়ার পরও ঘাতক লঞ্চ চালনাকারী এজহারনামীয় আসামিরা দ্রুত ঘাটে যাওয়ার আশায় অতিক্রম করার চেষ্টা করেন। যার কারণে মর্নিং বার্ডের সঙ্গে ধাক্কা লাগে এবং চোখের পলকেই লঞ্চটি পানিতে তলিয়ে যায়।’
এ মামলায় আসামিদের মধ্যে লঞ্চের মালিক মোসাদ্দেক হানিফ, লঞ্চটির কর্মচারী দেলোয়ার হোসেন, আবু সাঈদ, সেলিম হোসেন ও আবদুস সালাম জামিনে রয়েছেন। এ ছাড়া লঞ্চের ইঞ্জিনচালক শিপন হাওলাদার, শাকিল হোসেন, লঞ্চের মাস্টার জাকির হোসেন, আবুল বাশার মোল্লা, সুকানি নাসির মৃধা ও কর্মচারী মো. হৃদয় কারাগারে আছেন।
গত বছরের ২৯ জুন মুন্সীগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ড নামের একটি লঞ্চ সদরঘাটে পৌঁছানোর আগে চাঁদপুরগামী ময়ূর-২ লঞ্চের ধাক্কায় ডুবে যায়। দুর্ঘটনায় মর্নিং বার্ডের ৩৪ যাত্রীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তার পরদিন ৩০ জুন সদরঘাট নৌ পুলিশের এসআই শামসুল আলম বাদী হয়ে ঢাকা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। মামলায় দুর্ঘটনাকবলিত লঞ্চটিকে ধাক্কা দেওয়া সাতজনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরো পাঁচ-সাতজনকে আসামি করা হয়। এ মামলায় বেপরোয়াভাবে লঞ্চ চালিয়ে মানুষ হত্যা ও ধাক্কা দিয়ে লঞ্চ দুর্ঘটনার জন্য দণ্ডবিধির ২৮০, ৩০৪ (ক), ৪৩৭ ও ৩৪ ধারার অভিযোগ আনা হয়।