কিছুদিন দেশে করোনা সংক্রমণ স্থিতিশীল অবস্থা থাকলেও গেল কয়েকদিন হঠাৎ করে করোনা সংক্রমণ ঊর্ধ্বগতি হওয়ায় নতুন করে শঙ্কা বাড়ছে সবার মাঝে। এই পরিস্থিতিতে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মানলে প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করে মোবাইল কোড বসিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মানতে বাধ্য করা হবে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, লকডাউনের ব্যাপার সরকার সিদ্ধান্ত নিবেন। এ বিষয়ে শুক্রবার মিটিং হওয়ার কথা রয়েছে। এদিকে, স্বাস্থ্যবিধি না মেনে অনিয়ন্ত্রিত চলাফেরাকে দায় করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। সব ধরনের জনসমাগম আপতত স্থগিত রাখারও পরামর্শ দিচ্ছেন তারা।
বর্তমান করোনা সংক্রমণ রোধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কিছু প্রস্তাব যেমন, সম্ভব হলে সম্পূর্ণ লকডাউনে যেতে হবে। না হলে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সমন্বয় রেখে যেকোনো জনসমাগম বন্ধ করার সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। কাঁচাবাজার, পাবলিক ট্রান্সপোর্ট, শপিংমল, মসজিদ, রাজনৈতিক সমাগম, ভোট অনুষ্ঠান, ওয়াজ মাহফিল, রমজান মাসের ইফতার মাহফিল ইত্যাদি অনুষ্ঠান সীমিত করতে হবে। যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, সেগুলো বন্ধ রাখতে হবে। যেকোনো পাবলিক পরীক্ষা (বিসিএস, এসএসসি, এইচএসসি, মাদ্রাসা, দাখিলসহ) নেওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
এছাড়া, কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের আইসোলেশন করার পদক্ষেপ নিতে হবে। যারা রোগীদের সংস্পর্শে আসবে, তাদর কঠোর কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। বিদেশ থেকে বা প্রবাসী যারা আসবেন, তাদের ১৪ দিনের কঠোর কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজনে এই ব্যাপারে সামরিক বাহিনীর সহায়তা নেওয়া যেতে পারে। আগামী ঈদের ছুটি কমিয়ে আনা যেতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আইন আরও জোরালোভাবে কার্যকর করতে হবে। পোর্ট অব এন্ট্রিতে জনবল আরও বাড়াতে হবে এবং নজরদারির কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। সব ধরনের সভা ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে করার উদ্যোগ নিতে হবে। পর্যটন এলাকায় চলাচল সীমিত করতে হবে। করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে লকডাউনসহ ১২ দফা সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং সেটি গতকাল মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্র জানা গেছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে সংক্রমণ বাড়ছে,পর্যটন কেন্দ্রে ভিড়, বিয়ে, ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি ছাড়া। গত একমাসে প্রায় ২০ লাখ লোক ভ্রমণে গেছে চট্টগ্রাম অঞ্চলে। তারা স্বাস্থ্য বিধি না মেনেই এসব করছে৷ বিযে সামাজিক অনুষ্ঠানে যাচ্ছে। গত এক মাসে এক কোটি মানুষ বিয়ে ও সামাজিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছে।’ এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মানতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া কথা জানান মন্ত্রী।
আবারও লক ডাউন দেওয়ার সিদ্ধান্ত হচ্ছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই দেশের অর্থনীতি অবস্থা সচল থাকুক। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার কথা বারবারই বলছি। প্রয়োজন হলে লক ডাউনের সিদ্ধান্ত সরকার নেবে। দেশবাসী সহযোগীতা করলে করোনা নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে আশা করি। আমরা সব কিছু মেনে চললে আমাদের লক ডাউনের প্রয়োজন হবে না।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. লেনিন চৌধুরী দৈনিক ইত্তেফাক অনলাইনকে বলেন, বর্তমান করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ রাখতে সবাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রত্যেকে মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সব ধরনের মিছিল মিটিং জনসমগম আপাতত স্থগিত রাখতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখেই চলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে কোনো রকম খামখেয়ালিপনা করা যাবে না। তা না হলে সামনে জীবন দিয়ে এর খেসারত দিতে হবে।